জীবন প্রক্রিয়া সমূহ Class 10
প্রশ্নাবলি ১
(a) মানুষের মতো বহুকোশী জীবের অক্সিজেনের চাহিদা পূরণের জন্য ব্যাপন প্রক্রিয়া যথেষ্ট নয় কেন?
(1) বহুকোশী জীবের শারীরিক আকার ও কোষের সংখ্যা অনেক বেশি।
(2) এদের কেন্দ্রস্থলে অক্সিজেন পৌঁছানোর জন্য দ্রুত ও কার্যকরী পদ্ধতির প্রয়োজন।
(3) একক কোষের জীবের জন্য ব্যাপন প্রক্রিয়ায় সরাসরি অক্সিজেন শোষণ করা সহজ হলেও, বহুকোশী জীবের ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়।
(4) তাই, ফুসফুস বা অন্যান্য গ্যাস বিনিময় ব্যবস্থা যেমন ব্রঙ্কিয়াল টিউবস বা গিলস, আবশ্যক।
(b) কোনো বস্তু জীবিত কিনা তা স্থির করতে মানদণ্ড হিসাবে আমরা কী ব্যবহার করি?
(1) জীবনের কিছু মৌলিক বৈশিষ্ট্য হলো: বৃদ্ধি, প্রজনন, খাদ্য গ্রহণ, পরিবেশের প্রতি প্রতিক্রিয়া এবং মেটাবলিজম।
(2) বৃদ্ধি: জীবনের প্রাথমিক লক্ষণ, যা জীবের আকার ও ভর বৃদ্ধি করে।
(3) প্রজনন: নতুন জীব সৃষ্টি করার ক্ষমতা।
(4) খাদ্য গ্রহণ: শক্তির জন্য পুষ্টি গ্রহণ।
(5) মেটাবলিজম: শারীরিক রাসায়নিক প্রক্রিয়া যা শক্তি উৎপাদন করে।
(C) একটি জীবের জন্য বহি:পরিবেশ থেকে আগত কী কী কাঁচামাল ব্যবহৃত হয়?
(1) অক্সিজেন: শ্বাসের জন্য প্রয়োজনীয়।
(2) কার্বন ডাইঅক্সাইড: সালোকসংশ্লেষের জন্য ব্যবহৃত।
(3) জল: বিভিন্ন শারীরিক কার্যক্রমের জন্য অপরিহার্য।
(4) খাদ্য উপাদান: পুষ্টির জন্য প্রয়োজনীয়।
(5) খনিজ লবণ: দেহের বিভিন্ন কার্যক্রমে সহায়ক।
(D) জীবের জীবিত অবস্থাকে বজায় রাখার জন্য কোন কোন প্রক্রিয়া অপরিহার্য বলে তোমার মনে হয়?
(1) শক্তি উৎপাদন: শ্বাসক্রিয়া মাধ্যমে।
(2) বর্জ্য অপসারণ: দেহ থেকে অপ্রয়োজনীয় পদার্থ দূর করা।
(3) প্রতিক্রিয়া: স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকলাপের মাধ্যমে পরিবেশের প্রতি প্রতিক্রিয়া।
(4) প্রজনন ও বৃদ্ধি: নতুন জীব সৃষ্টি ও বৃদ্ধি ঘটানো।
(5) সঞ্চালন: খাদ্য ও অক্সিজেনের সঠিক বিতরণ।
প্রশ্নাবলি ২
(A) স্বভোজী এবং পরভোজী পুষ্টির মধ্যে কী কী পার্থক্য রয়েছে?
(1) স্বভোজী জীব: উদ্ভিদ, যা সালোকসংশ্লেষের মাধ্যমে নিজের খাদ্য তৈরি করে।
(2) পরভোজী জীব: প্রাণী, যা অন্য জীব বা উদ্ভিদ খেয়ে পুষ্টি গ্রহণ করে।
(3) স্বভোজী জীবগুলো সূর্যের আলো, জল ও কার্বন ডাইঅক্সাইড ব্যবহার করে।
(4) পরভোজী জীব খাদ্য গ্রহণের জন্য অন্য জীবের উপর নির্ভরশীল।
(5) স্বভোজী জীবেরা নিজেদের শক্তি উৎপাদনে সক্ষম, তবে পরভোজী জীবদের শক্তি অন্যদের থেকে আসতে হয়।
(B) সালোকসংশ্লেষের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামালগুলোর প্রত্যেকটি উদ্ভিদরা কোথা থেকে পায়?
(1) সূর্যের আলো: বায়ুমণ্ডল থেকে আসে।
(2) জল: মূলের মাধ্যমে মাটি থেকে শোষিত হয়।
(3) কার্বন ডাইঅক্সাইড: বায়ু থেকে পত্রের স্টোমাটার মাধ্যমে শোষিত হয়।
(4) ক্লোরোফিল: পাতায় বিদ্যমান যা সূর্যের আলো শোষণ করে।
(5) এগুলো মিলিত হয়ে সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে।
(C) আমাদের পাকস্থলীতে অ্যাসিডের ভূমিকা কী?
(1) পাকস্থলীর অ্যাসিড (যেমন হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড) খাদ্যকে ভেঙে সহজ করে।
(2) এটি প্যাথোজেন ধ্বংস করে।
(3) পরিপাক প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে এবং উৎসেচকের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।
(4) অ্যাসিড খাদ্যের প্রোটিনকে ভেঙে অ্যামিনো অ্যাসিডে রূপান্তরিত করে।
(5) এটি পাকস্থলীর ভিতরের পরিবেশের pH নিয়ন্ত্রণ করে।
(D) পরিপাককারী উৎসেচকসমূহের কাজ কী?
(1) খাদ্যকে ভেঙে পুষ্টির উপাদানে রূপান্তরিত করে।
(2) প্রোটিনকে অ্যামিনো অ্যাসিডে, কার্বোহাইড্রেটকে গ্লুকোজে এবং চর্বিকে ফ্যাটি অ্যাসিডে রূপান্তর করে।
(3) শরীরের শোষণ প্রক্রিয়া সহজ করে।
(4) এটি শক্তির উৎপাদন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে।
(5) উৎসেচকগুলো খাদ্যের বিভিন্ন অংশে নির্দিষ্ট কাজ করে।
(E) পাচিত খাদ্য শোষণ করার জন্য ক্ষুদ্রান্ত্রের গাঠনিক নক্সা কিরূপ হয়েছে?
(1) ক্ষুদ্রান্ত্রের দেওয়াল ভিলি ও মাইক্রোভিলি দ্বারা আবৃত।
(2) এই গঠন পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল বৃদ্ধি করে, যা খাদ্য শোষণের ক্ষমতা বাড়ায়।
(3) ভিলি খাদ্যদ্রব্যকে শোষণ করে রক্তে প্রবাহিত করে।
(4) মাইক্রোভিলি দ্বারা পৃষ্ঠীয় সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায়।
(5) এটি পুষ্টির দ্রুত শোষণ নিশ্চিত করে।
প্রশ্নাবলি ৩
(A) স্থলজ জীবেরা, জলজ জীবের তুলনায় শ্বাসকার্যের জন্য অক্সিজেন সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে কী সুবিধা পায়?
(1) স্থলজ জীবেরা বাতাসে অক্সিজেনের উচ্চ ঘনত্বের কারণে সহজে শ্বাস নিতে পারে।
(2) জলজ জীবেরা পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের সীমিত ঘনত্বের কারণে শ্বাস নিতে কষ্ট পায়।
(3) স্থলজ জীবদের জন্য অক্সিজেন সহজে শোষণ সম্ভব।
(4) জলজ জীবদের গ্যাস বিনিময়কে রক্তের মাধ্যমে সহজতর করা হয়।
(5) স্থলজ জীবের শ্বাসযন্ত্রের গঠন এই সুবিধাকে সমর্থন করে।
(B) বিভিন্ন জীবের মধ্যে গ্লুকোজকে শক্তিতে রূপান্তরিত করার জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রক্রিয়া কী কী?
(1) গ্লাইকোলাইসিস: গ্লুকোজকে পিরুভেটসে রূপান্তরিত করে এবং ATP উৎপাদন করে।
(2) ক্যালভিন চক্র: উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষের একটি অংশ, যেখানে গ্লুকোজ উৎপন্ন হয়।
(3) সেলুলার শ্বাস: এয়ারোবিক ও অ্যানায়রোবিক প্রক্রিয়া শক্তির উৎপাদনের জন্য।
(4) গ্লুকোজ ফসফরাইলেশন: শক্তি উৎপাদনে অতিরিক্ত জৈবিক প্রক্রিয়া।
(5) এটি শর্করা, চর্বি ও প্রোটিন দ্বারা শক্তি উৎপাদন করে।
(C) মানুষের দেহে অক্সিজেন ও কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিবহন কীভাবে ঘটে?
(1) অক্সিজেন ফুসফুসে শোষিত হয়ে রক্তের হিমোগ্লোবিনের সাথে যুক্ত হয়।
(2) এটি শরীরের কোষে পৌঁছে যায় এবং শক্তির উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়।
(3) কার্বন ডাইঅক্সাইড রক্তের মাধ্যমে ফুসফুসে ফিরে আসে।
(4) ফুসফুসে এটি শ্বাসের মাধ্যমে বের হয়ে যায়।
(5) এই প্রক্রিয়া গ্যাসীয় বিনিময়কে দ্রুত ও কার্যকরী করে।
(D) মানুষের ক্ষেত্রে গ্যাসীয় বিনিময়ের জন্য সর্বাধিক ক্ষেত্রফল লাভ করতে ফুসফুসন্বয়ের গাঠনিক নক্সা কীভাবে তৈরি হয়েছে?
(1) ফুসফুসের অ্যালভিওলি অনেক ক্ষুদ্র এবং বিপুল সংখ্যায় থাকে।
(2) এটি গ্যাসের বিনিময়ের জন্য পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল বৃদ্ধি করে।
(3) অক্সিজেন ও কার্বন-ডাইঅক্সাইডের বিনিময় অধিক কার্যকরী হয়।
(4) অ্যালভিওলি দেওয়াল পাতল ও স্ফীত, যা গ্যাসের গতিশীলতা বাড়ায়।
(5) এভাবে, শ্বাসক্রিয়া অধিক কার্যকরী হয়।
প্রশ্নাবলি ৪
(A) মানুষের সংবহনতন্ত্রের উপাদানগুলো কী কী? এই উপাদানগুলোর কাজগুলো কী কী?
(1) হৃদয়: রক্তকে পাম্প করে এবং সারা দেহে প্রবাহিত করে।
(2) রক্ত: অক্সিজেন, পুষ্টি ও বর্জ্য পরিবহন করে।
(3) রক্তনালী: রক্তকে শরীরের বিভিন্ন অংশে পৌঁছে দেয় (অ্যার্টারিজ, ভেইন, ক্যাপিলারি)।
(4) রক্তের প্লাজমা: খনিজ, হরমোন ও অন্যান্য পদার্থ পরিবহন করে।
(5) এই উপাদানগুলো একত্রে দেহের সঠিক কার্যক্রম বজায় রাখতে সহায়তা করে।
(B) স্তন্যপায়ী এবং পক্ষীদের ক্ষেত্রে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত, অক্সিজেনবিহীন রক্ত থেকে পৃথক থাকা প্রয়োজন কেন?
(1) অক্সিজেনযুক্ত ও অক্সিজেনবিহীন রক্তের পৃথকীকরণ শরীরের কোষগুলিকে যথাযথ পরিমাণ অক্সিজেন সরবরাহ করে।
(2) অক্সিজেনযুক্ত রক্ত হার্ট থেকে দেহের বিভিন্ন অংশে প্রবাহিত হয়।
(3) অক্সিজেনবিহীন রক্ত পুণরায় হার্টে ফিরে আসে এবং ফুসফুসে অক্সিজেন গ্রহণ করে।
(4) এটি শক্তির উৎপাদন এবং বর্জ্য অপসারণে সহায়ক।
(5) এভাবে শরীরের বিভিন্ন প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়।
(C) অতিমাত্রায় সংগঠিত উদ্ভিদদেহে সংবহনতন্ত্রের উপাদানগুলো কী কী?
(1) কাণ্ড: খাদ্য ও জল পরিবহনে সাহায্য করে।
(2) পাতা: সালোকসংশ্লেষের স্থান।
(3) শিকড়: জল ও খনিজ শোষণ করে।
(4) জাইলেম: জল ও খনিজ উপাদান পরিবহনে।
(5) ফ্লোয়েম: খাদ্য দ্রব্য পরিবহনে।
(D) উদ্ভিদে কীভাবে জল এবং খনিজের পরিবহন ঘটে?
(1) জল ও খনিজ মূল থেকে শোষিত হয়ে জাইলেমের মাধ্যমে উপরের দিকে চলে যায়।
(2) জাইলেম খাদ্য ও খনিজ উপাদান পরিবহনে সহায়তা করে।
(3) এটি পাতায় পৌঁছে যায়, যেখানে সালোকসংশ্লেষ ঘটে।
(4) শিকড়ের প্রক্রিয়ায় জল এবং খনিজের সঞ্চালন ঘটে।
(5) এটি উদ্ভিদের শারীরবৃত্তীয় কার্যক্রমে অপরিহার্য।
E) উদ্ভিদে কীভাবে খাদ্যের পরিবহন ঘটে?
(1) খাদ্য পাতার সালোকসংশ্লেষের মাধ্যমে তৈরি হয়।
(2) এটি ফ্লোয়েমের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অংশে পরিবহিত হয়।
(3) খাদ্য রক্তের মাধ্যমে কোষে পৌঁছায়।
(4) ফ্লোয়েম খাদ্য শোষণের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা।
(5) এটি সঠিকভাবে পুষ্টি সরবরাহ নিশ্চিত করে।
প্রশ্নাবলি ৫
(A) নেফ্রনের গঠন ও কার্য বর্ণনা কর .l
নেফ্রন হলো কিডনির মৌলিক কার্যকরী একক, যা মানবদেহে বর্জ্য অপসারণ এবং জল ও ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য রক্ষা করে। প্রতিটি কিডনিতে প্রায় ১০০,০০০ থেকে ১ মিলিয়ন নেফ্রন থাকে। নেফ্রনের গঠন ও কার্য নিম্নরূপ:
গঠন:
বাওম্যানের ক্যাপসুল (Bowman’s Capsule):
এটি নেফ্রনের প্রথম অংশ এবং রক্তের ফিল্টারিং স্থান।
এখানে রক্ত থেকে জল, গ্লুকোজ, আয়ন ও অন্যান্য ছোট অণু ফিল্টার হয়ে যায়, যা প্রাথমিক মুত্র গঠন করে।
প্রোক্সিমাল কনভোলিউটেড টিউবুল (Proximal Convoluted Tubule):
এখানে প্রাথমিক মুত্র থেকে ৬০-৭০% জল, গ্লুকোজ ও আয়ন পুনরায় শোষিত হয়।
এটি শক্তি ব্যবহার করে সক্রিয় শোষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঘটে।
লুপ অব হেনলে (Loop of Henle):
এই অংশটি দুইটি ভাগে বিভক্ত: ডেসেন্ডিং লিম্ব এবং অ্যাসেন্ডিং লিম্ব।
ডেসেন্ডিং লিম্ব জল শোষণের জন্য পেরমেবল, যেখানে অ্যাসেন্ডিং লিম্ব আয়ন (যেমন সোডিয়াম এবং ক্লোরাইড) শোষণের জন্য পেরমেবল।
ডিস্টাল কনভোলিউটেড টিউবুল (Distal Convoluted Tubule):
এখানে অতিরিক্ত আয়ন এবং বর্জ্য পদার্থের নিষ্কাশন ঘটে।
হরমোন (যেমন অ্যান্টিডিউরেটিক হরমোন) এর প্রভাব অনুযায়ী জল শোষণ নিয়ন্ত্রিত হয়।
কলেক্টিং ডাক্ট (Collecting Duct):
এটি একাধিক নেফ্রনের ডিস্টাল টিউবুলের সংযোগ স্থল।
এখানে মুত্রের শেষ পর্যায়ের গঠন ঘটে এবং জল শোষণ আরও নিয়ন্ত্রণ করা হয়, যা মুত্রের ঘনত্ব বাড়ায়।
কার্য:
ফিল্টারেশন: রক্ত থেকে বর্জ্য ও অতিরিক্ত পদার্থকে আলাদা করা হয়।
পুনরায় শোষণ: প্রয়োজনীয় উপাদান (যেমন জল, গ্লুকোজ, ও আয়ন) পুনরায় শরীরে শোষিত হয়।
রেচন: অতিরিক্ত বর্জ্য পদার্থ এবং আয়নাগুলোকে নিষ্কাশন করা হয়।
ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য: শরীরে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ও অন্যান্য আয়নাগুলোর স্তর নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
পানির ভারসাম্য: শরীরে পানির স্তরকে নিয়ন্ত্রণ করে, যা ডিহাইড্রেশন বা অতিরিক্ত জল ধারণের মতো সমস্যা প্রতিরোধ করে।
উপসংহার
নেফ্রন মানবদেহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাঠামো, যা কিডনির কার্যক্রমের মূল ভিত্তি। এর সঠিক কার্যকারিতা দেহে রক্তের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য, কারণ এটি বর্জ্য অপসারণ ও পানির ভারসাম্য রক্ষা করে।
(B) মানুষের দেহে জলের ভূমিকা কী?
(1) জল দেহের ৭০% গঠন করে এবং জীবনের জন্য অপরিহার্য।
(2) এটি শারীরিক রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া সমর্থন করে।
(3) শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
(4) এটি পুষ্টির শোষণ ও বর্জ্য অপসারণে গুরুত্বপূর্ণ।
(5) জল অভাব হলে ডিহাইড্রেশন ঘটে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
(C) গ্যাসীয় বিনিময়ের সময় শরীরে কী কী পরিবর্তন ঘটে?
(1) ফুসফুসে অক্সিজেন প্রবাহিত হয় এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড মুক্তি পায়।
(2) রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
(3) শরীরের কোষে অক্সিজেন পৌঁছায় এবং শক্তি উৎপাদন হয়।
(4) কোষ থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড রক্তে প্রবাহিত হয়।
(5) এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হলে দেহের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
(D) স্ট্রাকচারাল পর্যায়ে প্রাণীর শরীরের গঠন কেমন?
(1) প্রাণীদের দেহ কোষ, টিস্যু, অঙ্গ, এবং অঙ্গপ্রণালী দ্বারা গঠিত।
(2) কোষ: জীবনের মৌলিক একক।
(3) টিস্যু: কোষের একত্রিত গঠন যা নির্দিষ্ট কাজ করে।
(4) অঙ্গ: বিভিন্ন টিস্যুর সংমিশ্রণ যা নির্দিষ্ট কার্য সম্পাদন করে।
(5) অঙ্গপ্রণালী: একই ধরনের অঙ্গের সমন্বয় যা একটি নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদন করে।
(E) নিউরনের গঠন ও কার্যকারিতা বর্ণনা কর।
(1) নিউরন: স্নায়ুতন্ত্রের মৌলিক একক।
(2) গঠন অন্তর্ভুক্ত:
সেল বডি: নিউরনের কেন্দ্রীয় অংশ, যেখানে নিউক্লিয়াস থাকে।
ডেনড্রাইট: অন্যান্য নিউরনের সিগন্যাল গ্রহণ করে।
অ্যাক্সন: সিগন্যাল অন্য নিউরনে প্রেরণ করে।
মাইলোইন শীট: সিগন্যালের গতিকে বৃদ্ধি করে।
(3) নিউরন তথ্য সংবেদনে ও প্রক্রিয়াকরণের জন্য দায়ী।
(4) এটি শরীরের বিভিন্ন অংশের মধ্যে সংকেত পরিবহন করে।
(5) নিউরনের কার্যকারিতা স্বাভাবিক স্নায়ুতন্ত্রের কার্যক্রম বজায় রাখতে সহায়ক।
অনুশীলনী
(১) মানুষের ক্ষেত্রে বৃক্কগুলো যে তন্ত্রের অংশ, সেই তন্ত্রটি হল-
উত্তর: গ) রেচন
ব্যাখ্যা: বৃক্ক (কিডনি) রেচন তন্ত্রের অংশ, যা শরীরের রক্ত থেকে বিষাক্ত পদার্থ এবং অতিরিক্ত জল বের করে মূত্র উৎপন্ন করে। এটি দেহের জল ও ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য রক্ষা করতে সহায়ক।
(২) উদ্ভিদে জাইলেমের প্রধান কাজ কী?
উত্তর: ক) জলের পরিবহন
ব্যাখ্যা: জাইলেম হল উদ্ভিদের একটি টিস্যু যা মূল থেকে জল এবং খনিজ পদার্থ পাতায় পরিবহন করে। এটি দীর্ঘস্থায়ী এবং অব্যাহতভাবে জলের প্রবাহ নিশ্চিত করে।
(৩) স্বভোজী পুষ্টি পদ্ধতির জন্য প্রয়োজন-
উত্তর: ঘ) উপরের সব কয়টি
ব্যাখ্যা: স্বভোজী (অটোট্রফিক) পুষ্টির জন্য কার্বন ডাই অক্সাইড, জল এবং সূর্যালোকের প্রয়োজন হয়। ক্লোরোফিল সূর্যালোককে শোষণ করে এবং এই উপাদানগুলো মিলিত হয়ে গ্লুকোজ উৎপন্ন করে।
(৪) পাইরুভিক অ্যাসিড অ্যাসিড ভেঙ্গে কার্বন-ডাই-অক্সাইড, জল এবং শক্তি উৎপন্ন হওয়ার প্রক্রিয়াটি যে স্থানে ঘটে সেটি হল-
উত্তর: খ) মাইটোকনড্রিয়া
ব্যাখ্যা: পাইরুভিক অ্যাসিড অ্যাসিড গ্লাইকোলিসিসের পর মাইটোকনড্রিয়ায় প্রবেশ করে। এখানে এটি সিট্রিক অ্যাসিড চক্রের মাধ্যমে ভেঙ্গে কার্বন ডাই অক্সাইড, জল এবং ATP (শক্তি) উৎপন্ন করে।
(৫) আমাদের দেহে ফ্যাটের পরিপাক কীভাবে ঘটে? এই প্রক্রিয়াটি কোথায় ঘটে?
উত্তর: ফ্যাটের পরিপাক মূলত ক্ষুদ্রান্ত্রে ঘটে।
ব্যাখ্যা: লিভার থেকে উৎপন্ন পিত্তরস ফ্যাটের পরিপাকে সাহায্য করে। এই পিত্তরস ফ্যাটকে গ্লিসারোল ও ফ্যাটি অ্যাসিডে ভেঙ্গে দেয়, যা শরীরের জন্য সহজে শোষণযোগ্য।
(৬) খাদ্য পরিপাকে লালারসের ভূমিকা কী?
উত্তর: লালারসে উপস্থিত এমাইলেজ এনজাইম স্টার্চকে গ্লুকোজে রূপান্তর করতে সাহায্য করে।
ব্যাখ্যা: লালা খাদ্যকে নরম করে এবং এমাইলেজ স্টার্চের প্রথম পরিপাক শুরু করে, ফলে পরবর্তীতে খাবারকে সহজে শোষণ করা যায়।
(৭) স্বভোজী পুষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় শর্তগুলো কী কী এবং এই পুষ্টি প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন উপজাত বস্তুগুলো কী কী?
উত্তর: স্বভোজী পুষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় শর্তগুলো হল- কার্বনডাই অক্সাইড, জল, সূর্যালোক ও ক্লোরোফিল।
ব্যাখ্যা: এই প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন উপজাত বস্তুগুলো হল গ্লুকোজ (শক্তির উৎস) ও অক্সিজেন (বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে, যা অন্যান্য জীবের জন্য প্রয়োজনীয়)।
(৮) অবাত শ্বসন এবং সবাত শ্বসনের মধ্যে পার্থক্যগুলো কী কী? কিছু জীবের নাম উল্লেখ করুন যাদের দেহে অবাত শ্বসন ঘটে।
উত্তর:
অবাত শ্বসনে অক্সিজেনের প্রয়োজন হয় না, কিন্তু সবাত শ্বসনে অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়।
অবাত শ্বসনে অ্যালকোহল বা ল্যাকটিক অ্যাসিড উৎপন্ন হয়, কিন্তু সবাত শ্বসনে কার্বন ডাই অক্সাইড ও জল উৎপন্ন হয়।
উদাহরণ: ব্যাকটেরিয়া, ইস্ট এবং কিছু প্রাণী (যেমন: পোকা)।
(৯) সর্বাধিক গ্যাসীয় আদানপ্রদানের জন্য বায়ুথলির গঠন নক্সা কিরূপ হয়?
উত্তর: বায়ুথলি (অ্যালভিওলি) গঠিত হয় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কোষের মতো, যা পৃষ্ঠতল বৃদ্ধি করে এবং গ্যাসের আদানপ্রদানকে সহজতর করে।
ব্যাখ্যা: এই গঠন উচ্চ পৃষ্ঠতল এলাকা প্রদান করে, ফলে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইডের দ্রুত আদানপ্রদান সম্ভব হয়।
(১০) আমাদের দেহে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি হলে এর পরিণতি কী হবে?
উত্তর: হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি হলে অ্যানিমিয়া হতে পারে।
ব্যাখ্যা: হিমোগ্লোবিন রক্তের জন্য অক্সিজেন পরিবহন করে। এর ঘাটতি হলে শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেনের অভাব ঘটে, ফলে দুর্বলতা ও ক্লান্তি দেখা দেয়।
(১১) মানবদেহে দ্বিচক্রী রক্তসংবহন প্রক্রিয়াটি বর্ণনা করো।
উত্তর: মানবদেহে দ্বিচক্রী রক্তসংবহন প্রক্রিয়ায় অক্সিজেনযুক্ত রক্ত হৃদপিণ্ড থেকে শিরায় যায় এবং পরে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে অক্সিজেন সরবরাহ করে।
ব্যাখ্যা: এই প্রক্রিয়ায় অক্সিজেনহীন রক্ত পুনরায় হৃদপিণ্ডে ফিরে আসে এবং ফুসফুসে অক্সিজেন গ্রহণ করে। এটি শরীরের জন্য একটি কার্যকরী পদ্ধতি।
(১২) জাইলেম ও ফ্লোয়েম দিয়ে বস্তুসমূহের পরিবহনের মধ্যে কী কী পার্থক্য আছে?
উত্তর:
- জাইলেম জল ও খনিজ পদার্থ পরিবহন করে, ফ্লোয়েম খাদ্য (গ্লুকোজ) পরিবহন করে। – জাইলেমের পরিবহন একদিকে (মূলে থেকে পাতায়) হয়, ফ্লোয়েমের পরিবহন উভয় দিকে (পাতা থেকে মূলে এবং মূলে থেকে পাতায়) হয়।
ব্যাখ্যা: এই দুটি টিস্যুর মধ্যে পরিবহনের উদ্দেশ্য ও পদ্ধতি ভিন্ন, যা উদ্ভিদের কার্যকারিতা নিশ্চিত করে।
(১৩) ফুসফুসস্থিত বায়ুথলি এবং বৃদ্ধস্থিত নেফ্রনের গঠনও কাজের সাপেক্ষে এদের কার্যপদ্ধতি তুলনা করো।
উত্তর:
- বায়ুথলি: বায়ুথলি গঠিত হয় ক্ষুদ্র কোষ দিয়ে, যেখানে গ্যাসীয় আদানপ্রদান ঘটে। ফুসফুসে অক্সিজেন গ্রহণ এবং কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ হয়।
- নেফ্রন: নেফ্রন হল বৃক্কের মৌলিক একক, যা রক্ত থেকে অপচয় পদার্থ ও অতিরিক্ত জল শোধন করে এবং তা নেফ্রনের মাধ্যমে মূত্রে পরিণত হয়।
ব্যাখ্যা: দুটি গঠনের উদ্দেশ্য ভিন্ন হলেও, উভয়েই দেহের স্বাভাবিক কার্যক্রম রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।